
এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে মাঝরাতেই মথুরা সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পেয়ে উত্তরপ্রদেশের চিকিত্সক কাফিল খান জানালেন, ‘দারুণ স্বস্তি পেলাম। এ জন্য শুধুমাত্র বিচারব্যবস্থাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। STF আমাকে নির্মূলও করে দিতে পারত।’ তবে হাইকোর্ট দুপুরে রায় দিলেও কাফিল খানকে জেল থেকে মুক্তি দিতে লেগে গেল মধ্যরাত৷
তাঁর প্রাণনাশের ঝুঁকি থাকায় আপাতত কিছুদিন তিনি নিজের শহর গোরক্ষপুরে যাবেন না বলে জানিয়েছেন কাফিল খান। তিনি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মেডিক্যাল গাফিলতির প্রমাণ না-থাকলেও তিনি এখনও সাসপেনশনে আছেন। আপাতত কিছুদিন তিনি পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটাতে চান। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে গোরক্ষপুর মেডিক্যাল কলেজে পর পর শিশুমৃত্যুর ঘটনায় প্রথম শিরোনামে আসেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কাফিল। শিশুদের জন্য আপৎকালীন ভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করে দেওয়ার খবরে দেশ জুড়ে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জোগান কমে যাওয়ার জন্য তাঁকেই দোষী সাব্যস্ত করে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। সংশোধনাগারে প্রথম পাঁচদিন তাঁকে জল ও খাবার না-দিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। গ্রেফতার করার দিন টানা ২৪ ঘণ্টা অপ্রয়োজনীয় নানা প্রশ্ন করে এসটিএফ তাঁকে হেনস্থা করেছে বলে অভিযোগ তাঁর। এরপর সংশোধনাগারে নিয়ে গিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে জল, খাবার, টুথপেস্ট কিছু দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন চিকিত্সক।
এদিকে গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্টের রায়দানের পরও কাফিল খানকে মুক্তি দিতে মাঝরাত গড়িয়ে যায়। চলেছে একের পর এক টালবাহানা। জেল কর্তৃপক্ষের সাফাই, কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে৷ কমিউনিকেশন গ্যাপ৷ হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই কাফিল খানের পরিবার মথুরা জেলে পৌঁছলেও জেল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা কাফিলকে ছাড়তে পারবে না৷ কারণ, আদালতের নির্দেশের কপি তাদের কাছে এসে পৌছয়নি৷ মথুরা জেলের অফিসাররা বলেন, তাঁরা আদালতের নির্দেশ মানবেন না৷ জেলাশাসক যা বলবেন, তাই করবেন৷ জেলাশাসকের নির্দেশ এখনও আসেনি৷ তাই ছাড়া যাবে না কাফিলকে৷ মথুরা জেলাশাসকের কাছে পরিবার গেলে জেলাশাসক সর্ভাগ্য রাম মিশ্র জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ একদম ঠিক মতো পালন করা হবে৷ কিন্তু বিষয়টি আলিগড়ের জেলাশাসকের আওতাধীন৷ কারণ, তিনিই জাতীয় নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ করেছিলেন৷ এদিকে কাফিল খানের আইনজীবী ইরফান গাজির অভিযোগ, তিনি আলিগড়ের জেলাশাসকের সঙ্গে অনেকবার দেখা করার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু জেলাশাসক দেখা করেননি৷
এইভাবে ক্রমাগত বিষয়টিকে জটিল করে উপস্থাপন করা হতে থাকে কাফিল খানের পরিবারের কাছে। কাফিলের ভাই আদিল খানের কথায়, ‘জেল কর্তৃপক্ষ কাফিলকে ছাড়তে চাইছিল না৷ আরও কিছু মামলায় জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করছিল৷ আজ যদি ওঁকে জেল থেকে না ছাড়ত, আমরা বুধবার হাইকোর্টে ফের পিটিশন দাখিল করতাম৷’