
শুক্রবার ২০২১–২২ অর্থবর্ষের বাজেট তথা ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করতে গিয়ে প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, ‘আমাদের কল্যাণমূলক কর্মসূচি চলছে চলবে।’ উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় আজ মুখ্যমন্ত্রী বাজেট পেশ করলেন। এই বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দরাজ হলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। একাধিক নতুন প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। সামনেই বিধানসভা ভোট। স্বাভাবিকভাবে দ্বিতীয় তৃণমূল সরকারের এটা বিদায়ী বাজেট। যে কারণে এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সে ক্ষেত্রে ভোটের বাধ্যবাধকতাই মুখ্যমন্ত্রীকে খরচে দরাজহস্ত হতে বাধ্য করল বলে মত পর্যবেক্ষক মহলের।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্মরণে কলকাতা পুলিশে নয়া ব্যাটেলিয়নের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। ‘মাতৃবন্দনা’ নামে নতুন প্রকল্প ঘোষণা।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণদানের জন্য মাতৃ বন্দনা নামে নয়া প্রকল্পের ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আদিবাসী এবং তফসিলিদের জন্য দরাজ হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজেটে তিনি ঘোষণা করলেন, আগামী ৫ বছরে রাজ্যের তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদের জন্য ২০ লক্ষ পাকা বাড়ি তৈরি করবে রাজ্য সরকার। বাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি তফসিলি জাতি, উপজাতিদের জন্য ১০০টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, অলচিকি ভাষায় ৫০০টি স্কুল এবং নতুন দেড় হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। জঙ্গলমহল এলাকায় জঙ্গল সুন্দরী নামের শিল্পনগরী তৈরি হবে। বাজেটে চা বাগানের শ্রমিকদের উন্নতিতে দেড়শো কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজবংশী ভাষার ২০০টি বিদ্যালয়কে সরকারি অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এদিন তিনি বাজেটে জানান, গ্রামে গ্রামে ৪৬ হাজার কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরি করা হবে। ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা হবে। অশোকনগরে গ্যাস উন্নয়ন প্রকল্প এবং অশোকনগর শিল্পনগরীতে পরিণত করা হবে। পূর্ব মেদিনীপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলা হবে। রঘুনাথপুরে শিল্পনগরী তৈরি হবে। রুবি থেকে কালিকাপুর উড়ালপথ, উল্টোডাঙা থেকে পোস্তা বাজার উড়ালপথ, চিংড়িঘাটা থেকে নিউটাউন পর্যন্ত উড়ালপুল, পাইকপাড়া থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত উড়ালপথ নির্মাণ করা হবে। উড়ালপথ নির্মাণে ২,৫৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যাত্রী পরিবহণে সব যানবাহনের ক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি, ২০২১ থেকে ৩০ জুন, ২০২১ পর্যন্ত রোড ট্যাক্স সম্পূর্ণ মকুবের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পার্ক সার্কাসে স্কাইওয়াক নির্মাণের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া তৈরী হবে পাইকপাড়া থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত উড়ালপুল। ইএম বাইপাস থেকে নিউটাউন পর্যন্ত উড়ালপুল। আমির আলি রোড থেকে গুরুসদয় দত্ত রোড পর্যন্ত উড়ালপুল। কোচবিহারে নতুন রাস্তা হবে বলেও বাজেটে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়াও পার্শ্ব শিক্ষকদের প্রতি বছর ৩ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি অবসরকালীন ৩ লক্ষ টাকার ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়৷ এরই সঙ্গে তিনি পার্শ্ব শিক্ষকদের নতুন পদের কথা উল্লেখ করেন৷ নেপালি,হিন্দি,উর্দু, কামতাপুরী এবং কুড়মালি ভাষাতে রাজ্যে ১০০টি নতুন স্কুল তৈরির কথা এদিনের বাজেট ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের খুলবে স্কুল, তাও প্রত্যেক বছরই দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের একটি করে ট্যাব দেওয়া হবে বলে এদিনের অর্থ বাজেটে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পকে “তরুণের স্বপ্ন স্কিম” বলে এদিনের বাজেটে ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। মাদ্রাসাকে সরাসরি আর্থিক সাহায্য প্রদানের প্রস্তাব বাজেটে। সরকারি অনুমোদিত কিন্তু আর্থিক সহায়তা পায় না, সেগুলিকে আর্থিক সহায়তা করা হবে। এ জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
‘দুয়ারে সরকার’ ও ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচি দু’বার করে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমটি আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস ও দ্বিতীয়টি ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে হবে, বাজেটে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। শুধু চলতি বছরের ৩০ জুন অবধি নয়। তার পরেও বিনামূল্যে রেশন মিলবে বাংলায়। একইসঙ্গে ‘মা’ নামে এক নতুন প্রকল্পের সূচনার কথা এদিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজ্য জুড়ে তৈরি করা হবে ‘মা’ নামে কমন কিচেন। যেখান থেকে সামান্য কিছু অর্থ ব্যয় করে দু’বেলার খাবার পাবেন সমাজের দুঃস্থ মানুষজন। এছাড়া ভোটের আগে রাজ্যের প্রবীণ নাগরিক এবং বিধবাদের জন্য অন্তর্বর্তী বাজেটে বড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে রাজ্যের সব বাসিন্দাই মাসিক পেনশন পাবেন৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রত্যেক বিধবাকে মাসিক ভাতা দেবে রাজ্য সরকার৷ সব ধর্ম, বর্ণের বিধবারাই এই সুবিধে পাবেন৷ এই দুই প্রকল্পের জন্য মোট ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
বিধানসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে দ্বিতীয় তৃণমূল সরকারের এটাই শেষ বাজেট। সব মিলিয়ে এই বাজেট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মূলত ‘অতিমারি-আমফান-কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’-এই সবকিছুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলা যে ‘অপরাজিত’, সেই বার্তাই তুলে ধরা হল রাজ্য বাজেটে। ভোটের আগে রাজ্য সরকারের এ হেন বার্তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ। বাজেট বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘১০ কোটি বঙ্গবাসীর ভাগ্যাকাশে আজ সত্যিই দুর্যোগের ঘনঘটা দেখছি না। বরং নতুন সৌভাগ্যরবির উদয় দেখছি। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নতুন ভরকেন্দ্র হিসেবে জেগে উঠেছে বাংলা। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাই হয়ে উঠেছে নতুন গন্তব্য।’