top of page

কাজে ফিরছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, তবে প্রয়োজনে ফের যেন মুষ্টিবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানো যায় এই অঙ্গীকার নিতে হবে




কলকাতা, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪: শুক্রবার বিকেল ৩টেয় সময় স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য ভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মিছিল করেন তাঁরা। মিছিল শেষে ধর্না প্রত্যাহারের কথা জানান আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। মিছিলে যোগ দিয়েছেন সাধারণ মানুষও। পাশাপাশি প্রায় একই সময়ে আরজি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদের শহরের অন্য প্রান্তে এক অভিনব মিছিল শুরু হয়। হাইল্যান্ড পার্ক থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত রিলে মশাল মিছিলেও পা মেলান সাধারণ মানুষ।

৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। রাজ্যের জুনিয়র চিকিৎসকরা সুবিচার-সহ একগুচ্ছ দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। এরপর এক মাসের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কর্মবিরতি শুধু কলকাতার হাসপাতালগুলিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে তো বটেই দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও এই আন্দোলনে যোগ দেন। আন্দোলনকে আরও ঝাঁঝালো করতে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্না শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। টানা ১০ দিন সেই কর্মসূচি চলে। আজ সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে মিছিল শেষ করে তাঁরা জানান, ধর্না তুলে নেওয়া হচ্ছে। শনিবার থেকেই জরুরি পরিষেবায় কাজ শুরু করবেন তাঁরা। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে, 'আর কত দিন সময় চাই? জবাব দাও সিবিআই'।

পাশাপাশি হাইল্যান্ড পার্কে জমায়েত করেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ। সেখান থেকে বিকেল ৪ টের সময় মিছিল শুরু হয়। মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তার, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান সমর্থক, বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, শিল্পী, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী এবং নাগারিক সমাজ। দীর্ঘ ৪২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে হাইল্যান্ড পার্ক থেকে মশাল হাতে হাতে মিছিল পৌঁছেছে শ্যামবাজারে।

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডিসি (নর্থ) এবং স্বাস্থ্য দফতরের ডিএমই, ডিএইচএস বদল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। সে অর্থে আন্দোলনকারীদের ‘বড় মাপের জয়’ হয়েছে। তবে শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান তুলে নেওয়া নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কর্মস্থলে নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে ‘হুমকি সংস্কৃতি’ (থ্রেট কালচার) শেষ পর্যন্ত নির্মূল না হলে আবার নতুন উদ্যমে এই আন্দোলন শুরু করা যাবে কি না, তা নিয়ে দোলাচল কাজ করছে অনেকের মধ্যে। হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিকাঠামো গঠনের যে দাবি তাঁরা তুলেছিলেন, তা রাজ্য সরকার মেনে নিলেও ‘থ্রেট কালচার’ বন্ধ করা নিয়ে সে অর্থে কোনও ‘নিশ্চয়তা’ দেয়নি। জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকে বলছেন, থ্রেট কালচারের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে মেডিক্যাল কলেজগুলির অন্দরে ‘ঘুঘুর বাসা’ বা আর্থিক অনিয়মের চক্র। তা নির্মূল না করা গেলে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের ভবিষ্যতে নানা ভাবে ‘বিপন্ন’ করা হতে পারে। জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের অভিমত, কোনও আন্দোলনকেই কোথায় থামতে হবে, কোথায় এগোতে হবে, কোথায় খানিক পিছোতে হবে তা জানতে হয়। এই আন্দোলনে সিনিয়র ডাক্তারদের একটি বড় অংশ পাশে থেকেছে জুনিয়র ডাক্তারদের। সরাসরি সমর্থন এবং সাহায্যও করেছেন তাঁরা।

তবে সামনে আরও কঠিন লড়াই বলেই মনে হয়। কারন যদি সরকারের তরফে সবরকম দাবি পূরণ করা না হয় (যে সম্ভাবনা যথেষ্ট প্রবল এই সরকারের ক্ষেত্রে), সেক্ষেত্রে মূল দাবিকে অগ্রাহ্য করা কিন্তু উচিত হবেনা জুনিয়র ডাক্তারদের। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ফের তাঁরা যেন আবার সম্মিলিতভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন, সে বিষয়ে সকলের মধ্যে ঐকমত্য থাকতে হবে। থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে সবাইকে একজোট হয়ে চলতে হবে। কেউ কোনওভাবে বিপন্ন বোধ করলে যেন সকলে মিলে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, সেই জোর রাখতে হবে নিজেদের মধ্যে। আন্দোলনের অভিমুখ বদলে ঐক্যবদ্ধ ডাক্তারদের ছত্রভঙ্গ করে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত মানুষগুলো ফের আগের নোংরা খেলায় মেতে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। তখন প্রত্যেকটা হাত যেন আবার মুষ্টিবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে পারে এই অঙ্গীকার নিতে হবে জুনিয়র ডাক্তারদের।

Comments

Rated 0 out of 5 stars.
No ratings yet

Add a rating

Top Stories

bottom of page