তরুণী চিকিৎসক- পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পরে ফরেনসিক নমুনা সংগ্রহে বেনিয়মের অভিযোগ
কলকাতা, ৩০ অগাস্ট, ২০২৪: তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পরে নমুনা সংগ্রহে আরও বেনিয়মের তথ্য এ বার উঠে এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই সূত্রে নাকি জানা গিয়েছে, আরজি করে চিকিৎসক খুনের তদন্তে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহে বেনিয়ম হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘটনাস্থল থেকে যে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল, তাঁরা সেই কাজ করেননি। বদলে অন্য দু'জন সেই কাজ করেন।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞেরা মৃতদেহ থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন। তাঁরা চিকিৎসক। আর ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক গবেষকেরা। তাঁরা চিকিৎসক নন, কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শিতার প্রয়োজন হয় এর জন্যে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, দেহ উদ্ধারের দিন যে দুই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ঘটনাস্থলে দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করছে সিবিআই। দু’জনকে ইতিমধ্যেই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কখন, কোন ওপরওয়ালার নির্দেশে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তা ওই দু’জনের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছেন তদন্তকারীরা।
বেলগাছিয়ায় রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির কর্তাদেরও চিঠি পাঠানো হয়েছে সিবিআইয়ের তরফে। কিন্তু বেলগাছিয়ায় রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও রিপোর্ট সিবিআইকে দেওয়া হয়নি। উপরন্তু টালবাহানা অব্যাহত বলেও দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের। এই আবহে আদালতে আগামী শুনানিতে তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও কলকাতা পুলিশের অসহযোগিতার বিষয়ে লিখিত ভাবে জানানো হবে বলে দাবি করেছেন এক সিবিআই কর্তা।
সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, আর জি করের সেমিনার রুমে থিকথিকে ভিড়। ওই দিন সেমিনার রুমে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ আইনজীবী, আর জি করের ফরেন্সিক মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক দেবাশিস সোম-সহ আরও কয়েক জন চিকিৎসক, হাসপাতালের ফাঁড়ির কয়েক জন পুলিশকর্মী ছিলেন। সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের কথায়, “ঘটনাস্থলে আততায়ীর পায়ের ছাপ এবং হাতের ছাপের নমুনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘটনাস্থলে এত ভিড় থাকলে নমুনা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। দেবাশিস-সহ ফরেন্সিক মেডিসিনের চার জনকে থাকতে দেখে সংশয় প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকদের বড় অংশ। তাঁদের অভিযোগ, কোনও তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে হলে সেই বিষয়ে সব থেকে ভাল পরামর্শ দিতে পারেন এক ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তা হলে কি প্রথম থেকেই প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা শুরু করা হয়েছিল? যদি তা হয়ে থাকে, তা হলে কেন? কাকে আড়াল করতে?
ফরেন্সিক মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক দেবাশিস সোম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাঁকে সকাল থেকে সেমিনার রুমে ‘পোস্টিং’ করা হয়েছিল। কিন্তু কে সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা খোলসা করছেন না দেবাশিস।
এদিকে কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল ও ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিধিভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে অমিত মালব্য লিখেছেন, ‘ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে রাজ্যপালের দফতরকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ও ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
Comments