নবান্ন অভিযান ঘিরে দিনভর উত্তপ্ত রইল শহর, প্রতিবাদে আগামীকাল বিজেপি ডাকল বনধ, তৃণমূলের তরফে বনধ সফল না করার আহ্বান
কলকাতা, ২৭ অগাস্ট, ২০২৪: মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ নামে একটি সংগঠন। সেই অভিযানকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় শহরের বিভিন্ন প্রান্ত- সাঁতরাগাছি, ফোরশোর রোড, হাওড়া সেতু, হেস্টিংস এলাকা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করেছে আন্দোলনকারীরা এমন অভিযোগ। পাল্টা পুলিশের তরফে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান প্রয়োগ করা হয়েছে। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে৷ ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা৷ পুলিশও তার মোকাবিলা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।
মঙ্গলবার ছাত্রসমাজের ডাকা নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৩২ জন৷ ১৭ জন মহিলা আহত। ৩৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ১৫-২০ জনের মেডিক্যাল হচ্ছে হাওড়া এবং কলকাতায়। দিনের শেষে সাংবাদিকদের সামনে এমনই দাবি করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ পাল্টা তৃণমূলের দাবি, যদিও নবান্ন অভিযানে রাস্তায় যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের কতজন আসলে ‘ছাত্র’, তা নিয়ে ধন্দ আছে। কাউকে-কাউকে দেখে তো ‘ছাত্রদের’ দ্বিগুণ বয়সি মনে হয়েছে। এদিনের নবান্ন অভিযানে মোট ১৫ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। পোড়ানো হয়েছে পুলিশের বাইক৷
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নবান্ন অভিযানে পুলিশের ভূমিকার বিরোধিতায় মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা বাংলা বনধের ডাক দিয়েছেন। তার কিছু পরেই নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও বন্ধ মানা হবে না। বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধ প্রতিহত করে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে প্রশাসনের তরফে, জানিয়েছেন আলাপন। নবান্নের তরফে একটি নির্দেশিকা দিয়ে জানানো হয়েছে, বুধবার কোনও ক্যাজুয়াল লিভ নিতে পারবেন না সরকারি কর্মীরা। সমস্ত সরকারি এবং সরকার পোষিত সংস্থা খোলা থাকবে এবং হাজিরা স্বাভাবিক রাখতে হবে। যদি কেউ এ দিন অনুপস্থিত থাকেন সেক্ষেত্রে তা তাঁদের ক্ষেত্রে 'ডাইস নন' হিসেবে বিবেচিত হবে এবং ওই দিনের বেতন তাঁরা পাবেন না। আলাপনের পর মমতা মন্ত্রিসভার চার সদস্য চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসু, অরূপ বিশ্বাস এবং ইন্দ্রনীল সেন আরও একটি সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করলেন, মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের নামে অশান্তি পাকানোর পর বুধবার বন্ধের নামে আরও একটি অরাজকতা তৈরির ছক কষেছে বিজেপি।
এদিকে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ‘বেআইনি’ বলে কটাক্ষ শুভেন্দুর। এই সব কিছু নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘পুলিশ যে অত্যাচার করেছে, সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সুকান্ত মজুমদার বাংলা বনধের ডাক দিয়েছেন। বনধ শান্তিপূর্ণ হবে। আগামিকাল, ২৮ আগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বিজেপির কর্মীদের বলব, মহাজাতি সদন বা মেয়ো রোডে ওদের বাধা দেবেন না। ওরা প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। পা-দেবেন না।’’ আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে এবং পুলিশ যে অবিচার চালিয়েছে তার প্রতিবাদে বুধবারের বন্ধ ডাকা হয়েছে।’’ শুভেন্দুর দাবি, মঙ্গলবার ১৩২ জন জন আন্দোলনকারী গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন মহিলা। এঁদের মধ্যে ৩৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলেও দাবি শুভেন্দুর। বিজেপির তরফে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
Comments