বাংলাদেশে বন্দি থাকা ৯৫ জন ভারতীয় মৎস্যজীবীদের ১০ হাজার টাকার আর্থিক অনুদান, গঙ্গাসাগর সেতুর ঘোষণা
কলকাতা, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫: বাংলাদেশে বন্দি থাকা ৯৫ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী ফিরে এসেছেন দেশে। সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ তাঁদের ট্রলারে চাপিয়ে গঙ্গাসাগরে নিয়ে আসা হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা–সহ জেলা প্রশাসনের অফিসাররা। ঘটনাচক্রে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি দেখতে আজই গঙ্গাসাগরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই মৎস্যজীবীদের সঙ্গে দেখা করেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সহায়তাও করেন। প্রত্যেকের হাতে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেন তিনি। এ ছাড়াও এক মৎস্যজীবী ধরা পড়ার ভয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয়। সোমবার ওই মৃত মৎস্যজীবীর পরিবারের হাতে ২ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই মৎস্যজীবীদের ভারতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তৎপর হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। আজ গঙ্গাসাগর মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে কয়েক জন ভারতীয় মৎস্যজীবীকে মারধর করা হয়েছে। ওই মঞ্চ থেকেই মমতা বলেন, “কয়েক জন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। জানতে পারলাম, তাঁদের মারধরও করা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে গিয়ে হাতগুলি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। মোটা লাঠি দিয়ে তাঁদের মারা হয়েছে।” বাংলার মৎস্যজীবীরা যাতে আগামী দিনে আর কোনও ভাবেই জলসীমা পার না করেন, সে কথাও বলেন তিনি। অনেক সময়ে যে মৎস্যজীবীদের মাঝসমুদ্রে সীমানা স্থির করতে সমস্যা হয়, সে কথাও মানছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝড়-জলের মধ্যে অনেক সময় পথ হারিয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তবে জলসীমা অতিক্রম না-করার বিষয়ে মৎস্যজীবীদের সব সময়ে সতর্ক থাকার প্রস্তাব দেন মমতা।
পাশাপাশি বাংলাদেশেরও একটি ট্রলার জলসীমা পার করে এ দেশে চলে এসেছিল। বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদেরও সে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, অনেকেই অসুস্থ ছিলেন। এ দেশে তাঁদের ভাল করে চিকিৎসা করানো হয়। তাঁদের খুব যত্ন করে রাখা হয় এবং পরে ফেরত দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, ‘আমরা একটা সমুদ্রসাথী প্রকল্প চালু করব। ২ লক্ষ মৎস্যজীবী উপকৃত হবেন। যে দু’মাস মাছ ধরতে যেতে পারেন না, সেই সময় এই টাকা রাজ্য সরকার দেবে। আর মৎস্যজীবীর মৃত্যু হলে ২ লক্ষ করে টাকা দেওয়া হবে। এটা মৎস্যবন্ধু প্রকল্প। তার সঙ্গে মৎস্যজীবীদের পেনশন দেওয়া হবে। মৎস্যজীবীদের লোনের জন্য ক্রেডিট কার্ড করে দেওয়া হয়েছে।’
আজ গঙ্গাসাগরে ‘গঙ্গাসাগর সেতু’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার, তাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। যেখানে স্থলভাগের মূল ভুখণ্ডের সঙ্গে জুড়ে যেতে চলেছে সাগরদ্বীপ। আগামী চার বছরের মধ্যে এই সেতু গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতর। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ডিপিআর হয়ে গিয়েছে। টেন্ডারও পেয়ে গিয়েছে। সেতু তৈরী হয়ে গেলে পুণ্যার্থীরা গঙ্গাসাগর মেলায় আসার সময় কলকাতা থেকে সোজা গাড়ি নিয়ে কপিল মুনির আশ্রম পর্যন্ত চলে আসতে পারবেন।
Comments