বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিচ্ছেন অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুস
কলকাতা, ৬ অগাস্ট, ২০২৪: সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিচ্ছেন অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুস। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, “যে শিক্ষার্থীরা এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁরা যখন এই কঠিন সময়ে আমাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন, তাহলে আমি কীভাবে তা প্রত্যাখ্যান করি?”
অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে এখন স্থায়ী সরকার গঠন করা একটা চ্যালেঞ্জ। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে যে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা কখনোই কাম্য ছিল না। সেকথা স্বীকার করছেন একবাক্যে সব বিদগ্ধ জনেরাই। বাংলাদেশের প্রতিবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রেরাও এর দায় অস্বীকার করতে পারেন না। যে কোনও আন্দোলনের উদ্দেশ্য যেন অন্য দিকে প্রবাহিত না হতে পারে, তার জন্য প্রথম থেকেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা বাধ্যতামূলক। যেটার ঘাটতি নজরে পড়ছে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সচেষ্ট হয়েছেন বাংলাদেশের আন্দোলনকারীরা। অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে বঙ্গভবনে বৈঠক শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ১৩ জন সদস্যের একটি দল বৈঠক করছে। বৈঠকে রয়েছেন তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপকেরা। ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সদস্যেরা। তাঁরা বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। বেলা ৩ টের মধ্যে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সেই পথ ধরেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনার পথ খুলেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যেরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেগুলি হল, সংসদ ভেঙে দিয়ে ৬ আগস্ট বিকেলের মধ্যে সরকার গঠন, প্রধান বিচারপতির অপসারণ বা তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের প্রতি ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বিচারপতিদের অপসারণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন প্রধানদের অবসরে পাঠাতে হবে (তিন বাহিনী বাদে)। সরকারের মেয়াদ হতে হবে তিন থেকে ছ’ বছর (সর্বোচ্চ), মেয়াদ শেষের তিন মাস আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বাতিল করতে হবে, সরকারের সকল চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে, ‘ছাত্র, নাগরিক হত্যায় জড়িত’-দের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, নিহত, আহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জুলাই মাসকে জাতীয় শোকের মাস ঘোষণা করারও দাবি জানিয়েছে তারা। গত ১৫ বছর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, শ্বেতপত্র প্রকাশ করা সহ দুর্নীতি দমন কমিশনের পুনর্গঠনের দাবি করেছে পড়ুয়া সংগঠন।
এদিকে মঙ্গলবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয়দের পরিস্থিতি কী, সে দিকে নজর রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার দিল্লিতে সর্বদল বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। প্রয়োজন হলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত সমস্ত দলই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হয়েছে। এ বিষয়ে তারা কেন্দ্রের পাশে থাকবে বলেও জানিয়েছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসাবে রাহুল গান্ধীও একই অবস্থান নিয়েছেন।
Comments