মহাকুম্ভমেলা উপলক্ষে প্রয়াগরাজে আস্থা স্তম্ভ, খরচ হচ্ছে ১৭ কোটি টাকা
৩ জানুয়ারি, ২০২৫: আর দশ দিন পরেই মহাকুম্ভ আয়োজিত হতে চলেছে প্রয়াগরাজে। গোটা শহর জুড়ে স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে উৎসবের আমেজ। এরই মাঝে উক্ত রাজ্যের সরকার এক অভিনব পরিকল্পনা করেছে আসন্ন মহাকুম্ভমেলা উপলক্ষে। শহরের একটি রাস্তা বিশেষ ভাবে সাজাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। ১৭ কোটি টাকা খরচ করে রাজস্থান থেকে আনা ৮৪টি লাল পাথরের স্তম্ভ বসানো হচ্ছে পথের ধারে।
উত্তরপ্রদেশের নগরোন্নয়ন দফতর জানাচ্ছে, মহাকুম্ভে প্রয়াগরাজে এসে পর্যটকেরা যদি ওই ৮৪টি পাথরের স্তম্ভ পরিক্রমা করেন, তবে তা হবে ব্রহ্মাণ্ড পরিক্রমার সমতুল। মহাকুম্ভ থেকে প্রয়াগরাজের বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার পথেই বসছে এই স্তম্ভ। যার নাম দেওয়া হয়েছে আস্থা স্তম্ভ। স্তম্ভগুলি চারটির ক্রমানুসারে স্থাপন করা হবে এবং প্রতিটিতে ২১টি পিলার থাকবে। এই স্তম্ভে ভগবান শিবের ১০৮টি নাম খোদাই করা থাকছে। মাথায় রয়েছে একটি করে ঘট বা কলস।
আচার্য মিথিলেশ নন্দানি শরণ আস্থা স্তম্ভের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে লিখেছেন, ‘‘বলা হয়, জীবন-মৃত্যুর যে অনন্ত চক্র তার মধ্যে নিজের প্রকৃত রূপ বোঝার চেষ্টায় আমাদের আত্মা নিজেকে ৮৪ লক্ষ বার বদলায়। ওই পরিবর্তনের চক্র আবার চার ভাগে বিভক্ত। আত্মা শরীর লাভ করার পরে চার পুরুষার্থ ধর্ম, অর্থ, কর্ম এবং মোক্ষ পাওয়ার জন্য চার আশ্রম ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাসের মধ্যে দিয়ে যায়। আত্মার ওই সফরের মূল শক্তি হল বিশ্বাস। এক দিক ৮৪টি আস্থা বা বিশ্বাসের স্তম্ভকে চার সমান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আবার আত্মার ৮৪ লক্ষ জন্মের প্রতীক হিসাবে ৮৪ স্তম্ভ হয়েছে ৮৪ লক্ষ যোনির প্রতীক।’’ উত্তরপ্রদেশের নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব অমৃত অভিজাত এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "এক একটি স্তম্ভ এক লক্ষ যোনির সমতুল। যাকে হিন্দু দর্শনে সৃষ্টির মূল বলে ব্যাখ্যা করা হয়। তাই ৮৪টি স্তম্ভ পরিক্রমণ করলে এক জন পুণ্যার্থী ৮৪ লক্ষ যোনির পরিক্রমা করবেন। যা প্রতীকী ভাবে সৃষ্টির আদি অবস্থা পরিক্রমারই সমতুল।’’
চার ভাগে বিভক্ত (প্রতি ভাগে ২১টি করে) ওই ৮৪ স্তম্ভ তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। রাজস্থানের বাঁশি পাহাড়পুর থেকে লাল বালিপাথর এনে তৈরি করা হচ্ছে এক একটি স্তম্ভ। এক একটি বিশ্বাসের স্তম্ভ নির্মাণে খরচ পড়েছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। মোট ১৭ কোটি টাকা খরচ করছে যোগীর সরকার এই আস্থা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পে। মহাকুম্ভে প্রয়াগরাজে এসে পর্যটকেরা যদি ওই ৮৪টি পাথরের স্তম্ভ প্রত্যেকটি চারপাশ করে (দক্ষিণাবর্ত) প্রদক্ষিণ করে পরিক্রমা করেন, তবে তা হবে ব্রহ্মাণ্ড পরিক্রমার সমতুল। উত্তরপ্রদেশ সরকার বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতিতে বলেছে যে ১২ বছর পর অনুষ্ঠিত মহা কুম্ভের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে এবং ইভেন্টের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত প্রচেষ্টা চলছে। এই বছর, আনুমানিক ৪০ থেকে ৪৫ কোটি ভক্ত মহা কুম্ভের সময় প্রয়াগরাজ পরিদর্শন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যা ১৩ জানুয়ারী থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হতে চলেছে।
Comments