৮৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে মনোজ মিত্র, আমাদের হৃদয়ে থেকে যাবেন তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে
কলকাতা, ১২ নভেম্বর, ২০২৪: দীর্ঘ অসুস্থতার পর না-ফেরার দেশে চলে গেলেন প্রবীণ অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যকার মনোজ মিত্র। ১২ নভেম্বর সকাল ৮:৫০ মিনিটে দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৮৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা।
কিংবদন্তি শিল্পী বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ষীয়ান অভিনেতা তথা নাট্যকারকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। দিন কয়েক আগে শ্বাসকষ্ট, সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্যহীনতার পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত আরও বেশ কিছু সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। সেখানেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বেশকিছু দিন ধরেই হার্টের কঠিন অসুখে তিনি ভুগছিলেন। এ ছাড়াও হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ, সিওপিডি, ডিমেনশিয়া, হৃদযন্ত্রের বেশকিছু সমস্যাও ছিল তাঁর। বাইপাস সার্জারি হয়েছিল এবং পেসমেকারও বসেছিল।
তপন সিনহার 'বাঞ্ছারামের বাগান'-এর মতো চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য তাঁর অধিক পরিচিতি হলেও কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সিনেমা 'ঘরে বাইরে' এবং 'গণশত্রু'-তে অভিনয় করেছেন। বিশিষ্ট পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, বাসু চট্টোপাধ্যায়, তরুণ মজুমদার, শক্তি সামন্ত এবং গৌতম ঘোষের ছবিতেও নিজস্ব ঘরানায় অভিনয় করে চলচ্চিত্র জগতে নিজস্ব ঘরানা তৈরি করেছিলেন তিনি। অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, হরনাথ চক্রবর্তী, প্রভাত রায়, অঞ্জন চৌধুরীর মতো বাণিজ্যিক ছবির ফিল্মমেকারদেরও ফেভারিট হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কাজ করেছেন বাংলার বেশ কিছু কমার্শিয়াল ছবিতেও। লিখেছেন শতাধিক নাটকও। নাটকের নির্দেশনার দায়িত্ব পালন করেছেন। নাটকের মঞ্চ তাঁর অভিনয়ের সাক্ষী। ‘সাজানো বাগান’, ‘চোখে আঙুল দাদা’, ‘কালবিভঙ্গ’, ‘পরবাস’, ‘অলকানন্দার পুত্র কন্যা’, ‘নরক গুলজ়ার’, ‘অশ্বত্থামা’, ‘চাক ভাঙা মধু’, ‘মেষ ও রাক্ষস’, ‘দেবী সর্পমস্তা’, ‘ছায়ার প্রাসাদ’-এর মতো বহু নাটক লিখেছেন মনোজ। নানা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে তাঁর কাজ। বই প্রকাশ করেছেন।
কলেজে অধ্যাপনাও করেছেন মনোজ মিত্র। সুরি বিদ্যাসাগর কলেজে দর্শন পড়াতেনও। পরবর্তীতে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ব বিদ্যালয়ের ড্রামা ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হন। শিশিরকুমার ভাদুড়ির অবসরের পর তাঁকেই করা হয় সেই ডিপার্টমেন্টের প্রধান। পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমির সভাপতি ছিলেন মনোজ মিত্র। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৯ সালে পদত্যাগ করেন সেই পদ থেকে। ১৯৮৫ সালে সেরা নাট্যকার হিসেবে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান অভিনেতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সেরা নাট্যকারের সম্মান দিয়েছিল ১৯৮৬ সালে। এশিয়াটিক সোসাইটির সোনার পদক পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে।
অভিনেতা ও নাট্যকার মনোজ মিত্র চক্ষুদান করে গিয়েছেন৷ তাঁর চোখ দিয়ে কেউ দেখবে এই জগৎ এক অন্যরকম দৃষ্টিতে। তাঁর অভিনয়, তাঁর মেধা, তাঁর সৃষ্টি, তাঁর জীবনদর্শন আমাদের পাথেয় হয়ে থাকবে।
Comments